নাকের পলিপাস এর লক্ষণ, কারন ও প্রতিকার

1

নাকের পলিপ (nose polyps) একটি মারাত্নক রোগ । কমবেশি সবাই এই অসুখের নাম শুনেছেন । নাকের পলিপ (nose polyps)কে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । একটি হল ইটময়রেল পলিপ (ethmoidal polyps) আর অন্যটা মেক্সিলারি এনট্রোকন পলিপ( antrochoanal polyps) । ইটময়রেল পলিপ নাকের ঝিল্লিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করে ফুলে যাই এবং কোষের দেয়াল পাতলা হয় ও মাংসপেশি ফুলে নাক বন্ধ হয়ে যাই । মেক্সিলারি এনট্রোকন পলিপের কারনে নাকের দুই দিকে ফুলে নাক বন্ধ হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয় । পলিপে আক্রান্তদের মাঝে ইটময়রেল পলিপ বেশি দেখা যায় । আজ আমি এখানে 

নাকের পলিপাস এর লক্ষণ, কারন ও প্রতিকার

নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যার মাধ্যমে এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আপনারা প্রতিরোধের মাধ্যমে সুস্থ্য থাকতে পারবেন ।

ছেলেটি নাক পরিষ্কার করছে
নাকের পলিপের লক্ষণ, কারন ও প্রতিকার

নাকের পলিপাস এর লক্ষণ:

  • নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকে এবং নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যায় ।
  • নাকের দুইদিকে অথবা একদিকে সাদা ধূসর বর্ণের পিণ্ড আঙ্গুর ফলের মত ঝুলতে থাকে ।
  • চোখের আশপাশে ব্যাথা ও মাথাব্যাথা হতে পারে ।
  • কানে কম সোনা ও কান বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
  • পলিপ হলে প্রচণ্ড সর্দি , হাঁচি হয় ও হাঁচি দিলে চোখ দিয়ে পানি বের হয় ।
  • ঋতুর পরিবর্তনের সময় রোগী বার বার অসুস্ত হয়ে পড়ে ।

“নাকের পলিপের হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করুন, সুস্থ্য থাকুন।”

তিন (৩) মাসের মেডিসিন কোর্স ফি ৩৫০০ টাকা, কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশে মেডিসিন পেতে কল করুণ এই নম্বরেঃ +88-01616 567 567

বিজ্ঞাপনঃ

পলিপাসের কারনঃ

  • পলিপ নাকের আশপাশের সাইনাস বা বায়ুথলি থেকে উৎপন্ন হয় ।
  • শরীরে অধিক অ্যালার্জি থাকলে পলিপাস হতে পারে ।
  • ধুলা-বালুর মধ্যে থাকলে এবং ফুলের রেণুর কারনে ।
  • অনেক সময় পশু পাখির কারনে অ্যালার্জি হয় আর অ্যালার্জি থেকে পলিপ সৃষ্টি হয়
  • হাঁচি, কাশি, সর্দি থেকে সর্দি পেকে পুজ হয়ে পলিপ হয়
  • দীর্ঘ দিন নাকডাকা থেকে নাকের মাংস বেড়ে পলিপ সৃষ্টি হয়
  • নাক ময়লা যুক্ত থাকলে পলিপাস হয় ।

নাকের পলিপাস এর লক্ষণ, কারন ও প্রতিকার

পলিপাসের কারনে জটিলতাঃ

পলিপাসে কারণে নাকের শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয় ও তরল নিষ্কাশনকে অবরুদ্ধ করে এবং নাকে দীর্ঘমেয়াদী যন্ত্রণা, ফোলাভাব দেখা দেয় । এছাড়া ও নিম্নরূপ সমস্যা দেখা দেয় । 

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াঃ পলিপাসের কারণে রোগীর ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় এবং ঘুমের মাঝে অনেক সময় শ্বাসনালী বন্দ হওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। 

হাঁপানিঃ নাকের ভিতর ফুলে থাকার কারণে রোগীর শ্বাস কষ্ট ও হাঁপানির সমস্যা দেখা দেয় । যার কারণে তার দৈনন্দিন কাজে অমনোযোগ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় নাকের হাড় বেকে যাওয়ার মত সমস্যা ও দেখা যায়। 

সাইনাস সংক্রমণঃ দীর্ঘ মেয়াদে মাথা ব্যথা ও সাইনাসের মত সমস্যায় আক্রান্ত হয়। যা পরবর্তীতে মারাত্মক শারীরিক কষ্টের কারণ হতে পারে। 

নাকের পলিপাসের কারণে মেয়েটি হাসি দেওয়া অবস্থায়
হাচিঁ দেওয়া অবস্থায়

নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিকার:

এতক্ষণ আমি নাকের পলিপের লক্ষণ, কারন সম্পর্কে আলোচনা করেছি । এখন এর প্রতিকার নিয়ে কিছু কথা বলব। এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় অপারেশন করলে সাধারণত নাকের পলিপাস ভাল হয়ে যায়। তবে এই পলিপাস বার বার হ’তে পারে এবং প্রয়োজনবোধে কয়েকবার অপারেশন করা লাগতে পারে। হোমিও চিকিৎসায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে কোন প্রকার অস্ত্রপচার ছাড়াই নাকের পলিপাস থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়। হোমিও চিকিৎসায় বর্তমানে পলিপাসের দুই ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি দেখা যাচ্ছে, ১/ তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ও ২/ দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা ।

১/ তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক ভাবে ওষুধ আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগের মাধ্যমে পলিপের কারণে বৃদ্ধি প্রাপ্ত ( ফুলে ওঠা) মাংস পেশি কে অপসারণ করে চিকিৎসা প্রদান করা হয় যা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি।

২/ অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা পদ্ধতিতে খাবার ওষুধের মাধ্যমে রোগীর শারীরিক গঠন, জীবন আচরণ ও রোগের ইতিহাস জেনে পর্যালোচনার মাধ্যমে অসুস্থতাকে মূল হতে সারিয়ে তোলা হয় ।

নাকের পলিপের হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করুন, সুস্থ্য থাকুন।

তিন (৩) মাসের মেডিসিন কোর্স ফি ৩৫০০ টাকা,

কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশে মেডিসিন পেতে

কল করুণ এই নম্বরেঃ +88-01616 567 567

যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতন হলে ঘরোয়া চিকিৎসায়ও নাকের পলিপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় । এ জন্য সব ধরনের অ্যালার্জিটিক খাদ্য পরিহার, ঠান্ডা লাগা ও ধূলাবালি থেকে সাবধান থাকতে হবে। প্রথম অবস্থায় পলিপাসের চিকিৎসা না নিলে পরবর্তী সময়ে সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে সাইনোসাইটিস ও এজমা দেখা দেয়। এছাড়া আদা, রসুন ও হলুদ নিয়মিত খেলে পলিপাসের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায় ।

আদাঃ আদাতে রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। আদাতে রয়েছে-ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, লবণ, পটাশিয়াম ও ভোলাটাইল । যা আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক এন্টিবায়টিকের মত কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । আদা ভেজা বা কাচা ও শুকনো বা পাউডার করে খাওয়া যায়। কেউ কেউ আদার সাথে মধু মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। আদা পানিতে জ্বাল করে বা চায়ের সাথে জ্বাল করে ও খেতে পারেন ।

হলুদঃ পলিপাসের সমস্যার সমাধানে হলুদ কার্যকরী ভুমিকা রাখতে সক্ষম। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমূহ। যা আমাদের শারীরকে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ও সিক্স, ফাইবার, কপার, পটাশিয়াম প্রভৃতি উপাদান। হলুদ সাধারণত আমরা রান্নায় ও ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহার করে থাকি । আদা এর সাথে কাচা হলুদের টুকরা জ্বাল করে চা হিসেবে আমরা নিয়মিত ব্যবহার করে উপকার পেতে পারি ।

রসুনঃ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু যুগ ধরে রসুন ব্যবহৃত হয়ে আসছে । নাকের পলিপাসের সমস্যায় এটি বেশ কার্যকরী এক উপাদান। যে কোনো ধরনের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে এটি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেকেই সকালে খালি পেটে রসুন খেয়ে থাকেন । খালিপেটে খেলে অনেকের এসিডিটির সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে রসুনের একটি কোয়া পাতলা পর্দা বাদ দিয়ে ছেঁচ করে বা চিবিয়ে ভরা পেটে খেতে শুরু করুন। আস্তে আস্তে এর মাত্রা বাড়ানো যায়। তবে যাঁরা করোনারি হৃদরোগী, বিশেষ করে যাঁরা নিয়মিত অ্যাসপিরিন খান, তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবেই রসুন খাবেন।

পলিপাস থেকে মুক্ত থাকতে জীবনযাপন পদ্ধতি উন্নত করা খুবই জরুরী । ঠাণ্ডা গরম , ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । সাধারণ কনভেনশনাল চিকিৎসায় পলিপাসের সমস্যায় অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক গণ । তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় অপারেশন ছাড়া পলিপসের চিকিৎসা সম্ভব ।

নাকের পলিপাস এর অপারেশন ও জটিলতাঃ

নাকের পলিপের এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় অসুস্থতা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে ঔষধের মাধ্যমে পলিপের আকৃতি ছোট করার ও রাখার চেষ্টা করা হয়। অসুস্থতার মাত্রা বেশি হলে রোগী কে অপারেশনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অপারেশনের পরও আবার নতুন করে পলিপের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক রোগীর ৬-৭ বার অপারেশনের পরও এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি মেলেনা। অনেকের ক্ষেত্রে বারবার অপারেশনের ফলে নাকের ঘ্রাণ শক্তি প্রভাবিত হওয়ার পাশাপাশি ঘন শ্লেষ্মা এবং পোস্টনাসাল ড্রিপের সমস্যা দেখা দেয়, এবং আপনার সাইনাস ব্লক হলে এর ফলে বারবার সংক্রমণ হতে পারে।

এমনকি আপনার সফল অস্ত্রোপচারের পরেও, নাকের পলিপগুলি আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি ছোট কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে যে, সফল অস্ত্রোপচারের পরেও, নাকের পলিপগুলি আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং নাকের পলিপ সার্জারি করার ১২ বছর পরেও, প্রায় ৮০% লোক আবার পলিপে আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি এই রোগীদের ৩৬% এরও বেশি লোকদের আবারো পুনরায় অপারেশন করতে হয়েছিল।

তাই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে অপারেশনে না গিয়ে হোমিও চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে ও পাশাপাশি জীবনযাপনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুস্থ্য থাকা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়ে থাকেন।

রেফারেন্স (References) সমূহঃ

  1. WEB MD
  2. U.S. National Institutes of Health

1 COMMENT